ডায়েরীর পাতা থেকে
![]() |
ছবিঃ কলেজ মাঠে, সাধারন কোন এক দুপুরে। |
১.
মহৎ সাহিত্যকর্ম পাঠের পর অনেকসময়-ই বিস্ময়ে অভিভূত হয়ে লেখককে ঈর্ষা করেছি, তবে কখনো সাহিত্যিক হতে চেয়েছি বলে মনে পড়েনা। আজ হঠাৎ লিখতে বসে মনে হলো, সাহিত্যিক হতে পারলে আসলে খারাপ হতোনা। নিত্যান্তই কবি হলে কি খারাপ হত?
২.
একটু-আধটু ডায়েরী লিখি মাঝে মধ্যে। এই লেখাটি লিখেছিলাম বিদ্যালয় থেকে ফিরে, জীবনে শেষ বারের মত বিদ্যালয়ের কোন আনুষ্ঠানিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে।
লেখাগুলো পড়ে আবারো মনে হলো, আবেগের তীব্রতাটা কমেনি। কমার আশাও করছিনা।
৩.
জানুয়ারি, ২০১৫
এটা জীবনে একবারই! ... ... একটা ছেলেবেলা-বিদ্যাল্যয়জীবন-একটা জীবন ... ওহ! তাহলে আজ আনুষ্ঠানিক ভাবে স্কুল জীবনকে বিদায় বলেই ফেললাম! সত্যিই?
ছোটবেলায় সবাই বড় হতে চায়, একদিন তারা হয়, তখন সবাই আবারো ছোট হতে চায়, তারা কখনোই পারেনা। পুয়্যোর ম্যান! সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়, শুধুই কি একটি বিদ্যালয়-যেখানে আমার হাইস্কুল জীবন শেষ করলাম? (আমি নিশ্চিত নই!) সম্ভবত, আমার জীবনে এটি এমন কিছু যার সাথে কল্পনার কোনো কিছুর তুলনা করতে পারবোনা, লেখক হলে হয়তো বলতে পারতাম কিছু বানিয়ে বানিয়ে। টেকনিক্যাল-আমি; আর আমার জীবন, কোন দিক থেকে বলবো? আচ্ছা, একটু বলি? হুম!
এটি আমার দ্বিতীয় পরিবার। পরিবারের পর সবথেকে উষ্ণতম, আপনতম। এটি পথনির্দেশক, আমার দর্শন আর ব্যাক্তিত্বের হাতেখড়ি এখানেই। এটি এমনকিছু যা, প্রত্যেককে তার নিজের দর্শন আর ব্যাক্তিত্বের দিকে ধাবিত করে। একজন মানুষকে ঠিক 'তার মত' করে গড়ে তোলা, মানে একটা ব্যাক্তিত্ব তৈরি, একটা কোষ থেকে একটা মানুষ তৈরির মতই জটিল নয় কী?
যদি আমি বলি আমি টেকনিক্যালকে ভালোবাসি, অন্যায় হবে কি? নাহ! কেউ হয়তো বলবে আমি বলতেই পারি কারন এটা আমার হাইস্কুল ছিলো ... ... কিন্তু, যদি বলি আমি টেকনিক্যালকে ভালোবাসি শুধুমাত্র এইজন্যে নয় যে- জীবনের প্রায় সাতশত বিশ দিন এই প্রাঙ্গণের সাথে জড়িয়ে ছিলাম, এটা আমার হাইস্কুল...
তাহলে একটা কথা বলতে হয়ঃ
আমাদের অনুভূতি, চিন্তা, মন সবকিছুই মস্তিষ্কের সাথে সম্পর্কিত, কিন্তু আমরা তারপরেও বলি 'হৃদয়' বা 'হৃদপিণ্ড' হল মন। যদিও হওয়া উচিত, মস্তিষ্ক মানে মন। মানে ভুল একটা ধারণা, তাই নয় কী? মজার ব্যপারটা এখানেই, টেকনিক্যাল থেকে পাশ করে বেরিয়েছে আর সে কথা ভাবলেই বুকে চিনচিন অনুভূতি হয়না, এমন কেউ কি আছেন? এখন স্বর্গের কথা মনে আসলে ভাবি টেকনিক্যালের কথা, এই স্বর্গ অনুভবে অতকিছু লাগেনা, এজন্য হয়তো আপনাকে রৌদ্রতপ্ত দুপুরে কলেজ মাঠে শুয়ে থাকতে হতে পারে, হতে পারে আপনি জ্যোৎস্না রাত অথবা কালবোশেখির মধ্যে 'পহেলা বৈশাখ' এর কাজ শেষ করে মাত্র বেরুলেন, কিংবা টিপটিপ বৃষ্টিতে বটতলায় গেলেও এমন মনে হতেই পারে। এই ক্যাম্পাসে হাটতে হাটতেই খেয়াল করবেন কিছু অসাধারণ ছেলেমেয়েদের, কেউ হয়তো আম্রকাননে বসে অ্যান্ড্রোমিডা'র গল্প করছে, কেউ হয়তো ভাবছে 'শীত হয়ে এলো ... আমরা কি কিছু করবোনা দুঃস্থদের জন্য?,' আবার, কারো মনে হয়তো ঘুরপাক খাচ্ছে একটা জমজমাট সমস্যার সমাধান!
ভালোবাসি টেকনিক্যাল তোমাকে, অনেক অনেক এবং অনেক ভালোবাসি! হয়তো, আবারো কোনোদিন ভালোকিছু করে এক পলকের জন্য; হয়তো অতিথি হয়ে হলেও আসতে চাই, আর এই প্রেরণাই হয়তো আমাকে আর আমাদের সহপাঠী, অগ্রজ ও অনুজদের নিয়ে যাবে অনেকদূর।
৪.
কোনো একটা কাজে রংপুরে যাচ্ছিলাম। বাসের জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি; অনেকটা পথ গিয়ে খেয়াল করলাম আমার যাত্রাসাথী পাশে নেই, একজন বৃদ্ধলোক বসে আছেন, একটু দূরে আমার বন্ধুটি, ব্যপারটা বুঝতে মোটেই দেরি হলোনা। পুরো পথটা সে এভাবেই গেলো, ফেরার পথেও একই কান্ড! সেই বন্ধুটি পড়ালেখায় একেবারেই 'পিছনের দিকের' একজন! হয়তো সে কোনদিন সমাজবিজ্ঞানে 'সমাজের প্রতি আমাদের কর্তব্য' ভালোমত লিখতে না পেরে দু'নম্বর কম পেয়ে অনেক বকা খেয়েছিলো, কিংবা কেউ হয়তো তাকে বলেছিলো অপদার্থ! কিন্তু সে শিখেছে সেই প্রথম স্থানের বালকেরই মত যেও কিনা তার যায়গায় থাকলে একই কাজটি করতো। সেদিন বুঝেছিলাম টেকনিক্যাল এর মূলমন্ত্র আর দীক্ষা ব্যাপারটা আসলে কী! হাবীব স্যার কিংবা অন্যদের এত গর্বের উৎসটা কোথায়!
৫.
২০১৪ সালের এপ্রিল মাসের কোনো একটা দিন, জীবনের একটা অন্যরকম দুর্ঘটনায় ভয়ানক বিপর্যস্ত অবস্থা আমার। মেঘলা আকাশের মতই প্রচণ্ড মন খারাপ নিয়ে স্কুল ছুটির পর ডাকবাংলোর সামনে দিয়ে যাচ্ছি। পৃথিবীতে কেউ যদি বুঝতো আমার মনের অবস্থাটা ... এসব সাতপাঁচ ভেবেই এগুচ্ছিলাম। হঠাৎ দেখি আউয়াল স্যার রিকশায় বাড়ি ফিরছেন, কান্নাভেজা ঝাপসা চোখে সালাম দিবো কিনা, স্যার দেখলো কিনা এসব ভাবতে ভাবতেই শুনি কেউ একজন মায়াময় কন্ঠে বললো "কি ব্যপার আরিফ? মন খারাপ?" আউয়াল স্যার বলেছেন কথাটা ,ছোট একটা কথার মাঝে এত গভীরতা ছিলো যে আমি স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়ে রইলাম। ততক্ষণে রিকশা চলে গেছে দূরে,আরো দূরেই যাচ্ছে ... আর আমি তখনো স্তম্ভিত হয়ে দাড়িয়েই আছি। উপরে ছিলো বিশাল নীল আকাশ, দৈত্যাকার গাছগুলোর পাতার আবরণও যাকে ঢাকতে পারছিলনা, আকাশের শৌর্যময় বিশালতা বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছিলো আমি কতটা সৌভাগ্যবান। যেই বিশাল আকাশ দেখে মুগ্ধ হই, সেই আকাশ বুকের মাঝে ধারণ করে রাখতে পারেন ক'জন?
'আর ঠিক কতবার টেকনিক্যালে নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করবো?'
প্রথম প্রকাশঃ ২০১৫, 'আয়না,' স্মৃতি অ্যালবাম, এস.এস.সি ২০১৫ ব্যাচ, সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজ।
*ব্লগের লেখাটি ঈষৎ অনূদিত ও পরিমার্জিত।
I am so glad, that you are listening to this poor owl! On midnight :-)
ReplyDeleteYeah . Listening .
Deletewow..It's really good .Proud of you #Chotto_bondhu
ReplyDelete