আমাদের গর্ভাচেভ: একটি ব্যথামুক্ত সমাজের প্রত্যয়ে
১।
শুধুমাত্র মিখাইল গর্ভাচেভের কারনেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল নাকি অন্য কারন আসলে প্রধান তা আমরা নিশ্চিত নই। সুযোগ পেলেই আমাদের মহান বিপ্লবি ইশতিয়াক এইচ আকিব (মার্ক্সবাদী-বিজ্ঞান) তাকে নিয়ে দু-এক কটু কথা শুনিয়ে দেন, সে নিজেও ইতস্তত করে বলার চেস্টা করে সে এই রকম কিংবা কাছাকাছি একটা রুপ নিয়ে বুর্জোয়া আমেরিকা যাবে।
যাহোক, আমাদের মধ্যে এসব আলোচনা যতই হোকনা কেন , আমরা কেউ-ই ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা যাইনি।
ভুল বললাম, বিশিষ্ট ব্যথা বিশেষজ্ঞ পেইন কিলার- শহীদ আবুবকর আবতাহী গিয়েছিল!
উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, আমাদের সুধী সমাজে (নন-গিকিশ সোসাইটিতে) প্রায়শই আলোচনা হয় আমাদের মাঝে এই আবতাহী-ই গর্ভাচেভ কিনা :3 ।
২।
ব্রিগেডিয়ার আহমেদ ইশতিয়াক জিম, পেইন কিলার শহীদ আবুবকর আবতাহী , মীন+ময় মৃন্ময় কুমার কুন্ডূ - এরা সবাই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে অধ্যয়ন করতো।
মৃন্ময় যেহেতু আমার আগের বন্ধু তাই নটরডেম এ ভর্তির পর আমি পুরনো বন্ধু হিসেবে ওঁর সাথেই যাওয়া আশা করতাম উত্তরা থেকে।
নবীন বরন থেকে শুরু করে দু -একদিনের হাঁটাচলাতেই আমার জিমের সাথে পরিচয় হয়ে গেল ( ওঁ যে একটা জার্মান শেফার্ড-পুশি ক্যাট সেটা অবশ্য তখন জানতাম না :3 )
এবং, ওদের পারস্পরিক বন্ধু হিসেবে আবতাহীর সাথেও পরিচয়। কুমিল্লা জেলা স্কুল তারপর রাজউক। এমনিতেই আমি কুমিল্লা ভয় পাই (পেতাম!*)।
তাই ব্যপারটা আসলে যায়না। মানে, আমরা সবাই একহারা গড়নের কৃশকায় মানুশজন। আশেপাশে যাদের দেখি তাঁদের বেশীরভাগই আমাদের মতই । এরমাঝে নাদুস-নুদুস বুর্জোয়া গোছের একজন আমার বন্ধু হয়ে যাবে, ব্যপারটা আসলেই যায়না।
ব্যপারটা হল যখন আমরা একই হোস্টেল এ উঠলাম।
ওঁরা মানে জিম, মৃন্ময় , আবতাহী দ্বিতীয় তলায় একটা ফ্ল্যাটে উঠলো। মৃন্ময় , জিম একি রুমে ার আবতাহী তার সাথের লাগান রুমে একা উঠল। আমার বিরক্তি চরমে উঠল যখন দেখলাম, এই খোকার সাথে ওঁর মা থাকবে, বস্তুত;এর আগে আবতাহী ইউএসএ গেলেও ঢাকার কোথাও একা যায়নি :3 যেখানেই যাক কেউ না কেউ থাকে।
যখনই যাই দেখি পড়ছে, মৃন্ময় ওঁর গোত্রের হলেও (মানে পড়ালেখা ওঁ এন্ডিসি গ্রুপে! ) ওঁ এত পড়তোনা। সারাদিন চিল বাকিসময় জ্ঞান আহরণ (কিংবা সারাদিন জ্ঞান আহরণ বাকি সময় পড়াশোনা) করত, আর জিমকে তখন বুঝে উঠতে পারিনি :3
আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলাম, আবতাহী ভালো ছেলে। শুধু ভালো না, অতি ভালো।
রাত যখন গভীর হয়, মৃন্ময় , জিম চিল করে, আন্টি বিছানায় শুয়ে থাকে আবতাহী তখন পাশে টেবিলে বসে কোরান শরীফ তিলাওয়াত করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত-ও ক্বাযা করেনা। নিখাদ ভদ্রছেলে যাকে বলে।
পছন্দ না করার কোন কারন নেই, কিন্তু আমার ওঁকে, আসলে পছন্দ হতনা। কেমন যেন আঁতেল আঁতেল, সেলফিশ ধরনের... আর কি সেটা জানিনা, কিন্তু ভালো লাগতনা এটা হল কথা।
বস্তুত; এই ফাকে জানিয়ে রাখি আমার ভালো মানুষ কখন-ই ভালো লাগেনা ,এখন লাগেনা।
সত্যি বলতে তখন আমি জানিনা কিংবা বুঝিনি যে-
'প্রত্যেকটা মানুষ এক একটা মহাকাব্য..."
এই নাদুসনুদুস ছেলেটারও কত গল্প আছে! এই ছেলেটাও ঠিক আমাদের-ই মত (ভুল ভাববেননা, আমি ওঁকে মোটেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ভাবতাম না :3 ), সেও মাঝে মাঝে পেইন কিলার হয়ে যেতে পারে...
মাঝেমধ্যে আঙ্কেল আসতেন অনেকগুলো খাবার নিয়ে, মাঝেমধ্যে আন্টি ডেকে কথা বলতেন। এরপরে আমার ঠিক মনে নেই কবে যেন , আমরা একসাথে কোন প্রগ্রামে গিয়েছিলাম।
সেই বোধহয় শুরু, এরপর প্রগ্রামিং কন্টেস্ট সহ নানা জায়গায় আস্তে আস্তে যাওয়া শুরু হতেই আমার ওঁকে ভালো লাগতে শুরু করল।
৩।
তবে দুর্মুখেরা বলে, একরাতে প্রচন্ড ক্ষুধার্থ অবস্থায় খাওয়ার জন্য সে যখন ডিমভাজি, পাউরুটি আর মায়োনেজ দিয়েছিল তখন থেকেই নাকি আমি আর ওঁকে অপছন্দ করিনা :3 ।
যাহোক, এরপরে কলেজ এ নানা প্রোগ্রামে, আমি এই ভালো ছেলেটার সাথে নানা সময় নানা কাজ করেছি, নানা জায়গায় গিয়েছি।
এর মাঝে আমরা হোস্টেল পরিবর্তন করেছি, তারপরে যেন আরো ভালো সম্পর্ক হয়েছে।
যাহোক এখন আমার কুমিল্লা- ভীতি কিভাবে কাটল তা বলি।
৪।
আমি বাংলাদেশের সাধারন মানুষ হিসেবেই কুমিল্লা(অতীতে) -নোয়াখালি- বরিশাল (অতীতে*) ভয় পেতাম।
তারওপরে ওঁর বাজখাই স্বরভঙ্গিমা আমাকে যথেস্ট ভীতিতে রাখতো।
ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে মারা খেয়ে যখন এবছর কুমিল্লা যাওয়ার চিন্তা করলাম, তখন ঈশ্বর নিশ্চয়ই হেসেছিলেন।
(রবীন্দ্রনাথ একবার ফুল পিশে রঙ বের করার জন্য একটা যন্ত্র বানানোর চেস্টা করে 'মারা খেয়ে' বলেছিলেন "যে যা নয় নিজেকে যখন তাই ভাবে তাঁর মাথা হেঁট করে দেবার এক দেবতা তৈরি থাকেন, শাস্ত্রে এমন কথা আছে" :3)
আমরা পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে একদিন কুমিল্লার উদ্দেশ্যে চললাম, আমার কুমিল্লা ঘুড়ে বেড়ানোর উত্তেজনাও ছিল বটে; ৩১ তারিখ অলিম্পিয়াড শেষে ময়নামতি, ভিক্টোরিয়া কলেজ এসব বেড়ানোর প্লান করছিলাম।
আগেরদিন রাতে ওঁর ফুপুর বাড়িতে পৌছালাম, এবং আমার কুমিল্লাভীতি* কেটে গেল। বড় অমায়িক মানুষ ওঁরা সবাই।
পেটপুরে খেয়েদেয়ে একটু পড়ালেখা করে কাল কি হবে এই ভেবে ভেবে আরাম করে ঘুমোলাম। শীতের সময়, সকালে উঠেই ভিক্টোরিয়া কলেজ যেতে হবে।
ঘুম থেকে উঠে গোয়েন্দাগিরি করতে করতে নাচতে নাচতে চলে গেলাম। কুমিল্লা শহর টা মোটামুটি ভালোই (যদিও ওমর ভাইয়া ভুল বলেননা 'ঢাকার বাইরে গোটা বাংলাদেশ-ই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ' :3) , মাঝে মধ্যে পুকুর দেখা যায়, সবাই দেখি আমাদের মতই মানুষ(!)
যাহোক, একসময় পৌঁছে গেলাম, ভিক্টোরিয়া কলেজ গেটে। পৌঁছে দেখি পুরো ফাঁকা, আমরা ভাবলাম আজ না আবার ২০ জন প্রতিযোগি হয়, আর আমরা ২০ তম হই :#
এদিক সেদিক তাকিয়ে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়লাম, ঠিক যায়গা এসেছি তো!
নাহ, সব তো ঠিক-ই আছে। তাহলে?
আমি ভাবছিলাম, আমার মাথায় যা আসছিল তা যেন সত্যি না হয়!
......... ... ... ...
আমি বললাম একটু দাঁড়াও, মোবাইলে দেখি, এবং যা ভেবেছিলাম মানে ৩০ তারিখ অর্থাৎ গতকাল-ই হয়ে গেছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড।
... ... ... ... তারপর বাকিটা ইতিহাস।
আবতাহী বাকি পথ চুপচাপ চলে আসলো বাসায়। এরপর বাসে আগুন সহ নানা মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে বিমর্ষ পরিবেশে ঢাকায় চলে এসে 'অলিম্পিয়াড নিপাত যাক, প্রলেতারিয়েত মুক্তি পাক" চিন্তা করে আমরা টেস্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।
৪।
যখন ই যাই, দেখি আবতাহী সবসময়ের মতই ওঁর টেবিলে বসে পড়ছে। আমিও বিদ্রুপ করতে ছাড়িনা।
এত পড়ে কি করবা, লাভ নাই... ...
আমি তখন বোকা ছিলাম, কে জানে এখন আছি।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ও টেস্টে ৫০ তম হল!
বাইরের কেউ বুঝবেনা নটরডেমে ২০০ থেকে ৫০ হওয়া কত কঠিন। কিন্তু এই ব্যপারটা ওঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ সত্যিই জাগিয়ে তুলল।
"Hard Work Pays Off" কথাটার প্রমাণ সচক্ষে দেখলাম।
সত্যিই বলতে এরকম অবাক আমি খুব কম-ই হয়েছি।
৫।
আবতাহী একটু আধটু নাদুস নুদুস ইংরেজিতে যাকে বলে Chubby Looking.
মোটেও মোটা না।
তবে একই হোস্টেল থেকে তাঁর সুস্বাস্থের রহস্যের সন্ধান দুর্মুখেরা পেল মাত্র কিছুদিন আগে, যদিও তাঁরা নিন্দুক । কিন্তু, তারপরেও "যা কিছু রটে তাঁর কিছুনা কিছু তো বটে" :3
এর বেশিকিছু লিখলাম না, আমার প্রানের মায়া আছে। :) (ব্যাঙ! ইমোজি)
৬।
ভালো থাকুক এই নাদুস নুদুস বুর্জোয়া, আমাদের গর্ভাচেভ; মাতৃভক্ত, বন্ধুবৎসল (বস্তুত; আমাদের সুধী সমাজের আলোচনায় যখন পেট টান পরে, একটু মিনমিন করে ওঁর দিকে চাইলেই খাবার জুটে যায় )
শহিদ আবুবকর আবতাহী দেশ, সমাজ , কোচিং সেন্টারের মডেলে পরিণত হোক , জাগতিক ব্যাথা শোষণ করে আরো ফুলে ফেপে উঠুক। সবসময় হাসিমুখ ধরে রাখুক (তাই বলে 'জোকার' না -_- !)
আর আমাদের প্রতি আরো সুবিচার করুক।
একটা অনুরোধ, "অবিশেষন যুক্ত ভাই আমার, দয়া করে গলার স্বরভঙ্গি টা বদলাও It sucks! :3"
স্টারবাকসের কফি খেতে খেতে যেন কোনো একদিন এই লেখাটা আবারো পড়ার সৌভাগ্য হয়। :)
শুধুমাত্র মিখাইল গর্ভাচেভের কারনেই সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয়েছিল নাকি অন্য কারন আসলে প্রধান তা আমরা নিশ্চিত নই। সুযোগ পেলেই আমাদের মহান বিপ্লবি ইশতিয়াক এইচ আকিব (মার্ক্সবাদী-বিজ্ঞান) তাকে নিয়ে দু-এক কটু কথা শুনিয়ে দেন, সে নিজেও ইতস্তত করে বলার চেস্টা করে সে এই রকম কিংবা কাছাকাছি একটা রুপ নিয়ে বুর্জোয়া আমেরিকা যাবে।
যাহোক, আমাদের মধ্যে এসব আলোচনা যতই হোকনা কেন , আমরা কেউ-ই ইউনাইটেড স্টেটস অব আমেরিকা যাইনি।
ভুল বললাম, বিশিষ্ট ব্যথা বিশেষজ্ঞ পেইন কিলার- শহীদ আবুবকর আবতাহী গিয়েছিল!
উপরের কথাগুলো বলার উদ্দেশ্য হল, আমাদের সুধী সমাজে (নন-গিকিশ সোসাইটিতে) প্রায়শই আলোচনা হয় আমাদের মাঝে এই আবতাহী-ই গর্ভাচেভ কিনা :3 ।
![]() |
| Did I lie? When I meant, he is little chubbier :3 . |
২।
ব্রিগেডিয়ার আহমেদ ইশতিয়াক জিম, পেইন কিলার শহীদ আবুবকর আবতাহী , মীন+ময় মৃন্ময় কুমার কুন্ডূ - এরা সবাই রাজউক উত্তরা মডেল কলেজে অধ্যয়ন করতো।
মৃন্ময় যেহেতু আমার আগের বন্ধু তাই নটরডেম এ ভর্তির পর আমি পুরনো বন্ধু হিসেবে ওঁর সাথেই যাওয়া আশা করতাম উত্তরা থেকে।
নবীন বরন থেকে শুরু করে দু -একদিনের হাঁটাচলাতেই আমার জিমের সাথে পরিচয় হয়ে গেল ( ওঁ যে একটা জার্মান শেফার্ড-পুশি ক্যাট সেটা অবশ্য তখন জানতাম না :3 )
এবং, ওদের পারস্পরিক বন্ধু হিসেবে আবতাহীর সাথেও পরিচয়। কুমিল্লা জেলা স্কুল তারপর রাজউক। এমনিতেই আমি কুমিল্লা ভয় পাই (পেতাম!*)।
তাই ব্যপারটা আসলে যায়না। মানে, আমরা সবাই একহারা গড়নের কৃশকায় মানুশজন। আশেপাশে যাদের দেখি তাঁদের বেশীরভাগই আমাদের মতই । এরমাঝে নাদুস-নুদুস বুর্জোয়া গোছের একজন আমার বন্ধু হয়ে যাবে, ব্যপারটা আসলেই যায়না।
ব্যপারটা হল যখন আমরা একই হোস্টেল এ উঠলাম।
১৮৭/১ আরামবাগ, মধুমিতার গলি, মতিঝিল , ঢাকা
ওঁরা মানে জিম, মৃন্ময় , আবতাহী দ্বিতীয় তলায় একটা ফ্ল্যাটে উঠলো। মৃন্ময় , জিম একি রুমে ার আবতাহী তার সাথের লাগান রুমে একা উঠল। আমার বিরক্তি চরমে উঠল যখন দেখলাম, এই খোকার সাথে ওঁর মা থাকবে, বস্তুত;এর আগে আবতাহী ইউএসএ গেলেও ঢাকার কোথাও একা যায়নি :3 যেখানেই যাক কেউ না কেউ থাকে।
যখনই যাই দেখি পড়ছে, মৃন্ময় ওঁর গোত্রের হলেও (মানে পড়ালেখা ওঁ এন্ডিসি গ্রুপে! ) ওঁ এত পড়তোনা। সারাদিন চিল বাকিসময় জ্ঞান আহরণ (কিংবা সারাদিন জ্ঞান আহরণ বাকি সময় পড়াশোনা) করত, আর জিমকে তখন বুঝে উঠতে পারিনি :3
আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলাম, আবতাহী ভালো ছেলে। শুধু ভালো না, অতি ভালো।
রাত যখন গভীর হয়, মৃন্ময় , জিম চিল করে, আন্টি বিছানায় শুয়ে থাকে আবতাহী তখন পাশে টেবিলে বসে কোরান শরীফ তিলাওয়াত করে। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের এক ওয়াক্ত-ও ক্বাযা করেনা। নিখাদ ভদ্রছেলে যাকে বলে।
পছন্দ না করার কোন কারন নেই, কিন্তু আমার ওঁকে, আসলে পছন্দ হতনা। কেমন যেন আঁতেল আঁতেল, সেলফিশ ধরনের... আর কি সেটা জানিনা, কিন্তু ভালো লাগতনা এটা হল কথা।
বস্তুত; এই ফাকে জানিয়ে রাখি আমার ভালো মানুষ কখন-ই ভালো লাগেনা ,এখন লাগেনা।
সত্যি বলতে তখন আমি জানিনা কিংবা বুঝিনি যে-
'প্রত্যেকটা মানুষ এক একটা মহাকাব্য..."
এই নাদুসনুদুস ছেলেটারও কত গল্প আছে! এই ছেলেটাও ঠিক আমাদের-ই মত (ভুল ভাববেননা, আমি ওঁকে মোটেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ভাবতাম না :3 ), সেও মাঝে মাঝে পেইন কিলার হয়ে যেতে পারে...
মাঝেমধ্যে আঙ্কেল আসতেন অনেকগুলো খাবার নিয়ে, মাঝেমধ্যে আন্টি ডেকে কথা বলতেন। এরপরে আমার ঠিক মনে নেই কবে যেন , আমরা একসাথে কোন প্রগ্রামে গিয়েছিলাম।
সেই বোধহয় শুরু, এরপর প্রগ্রামিং কন্টেস্ট সহ নানা জায়গায় আস্তে আস্তে যাওয়া শুরু হতেই আমার ওঁকে ভালো লাগতে শুরু করল।
৩।
তবে দুর্মুখেরা বলে, একরাতে প্রচন্ড ক্ষুধার্থ অবস্থায় খাওয়ার জন্য সে যখন ডিমভাজি, পাউরুটি আর মায়োনেজ দিয়েছিল তখন থেকেই নাকি আমি আর ওঁকে অপছন্দ করিনা :3 ।
যাহোক, এরপরে কলেজ এ নানা প্রোগ্রামে, আমি এই ভালো ছেলেটার সাথে নানা সময় নানা কাজ করেছি, নানা জায়গায় গিয়েছি।
এর মাঝে আমরা হোস্টেল পরিবর্তন করেছি, তারপরে যেন আরো ভালো সম্পর্ক হয়েছে।
যাহোক এখন আমার কুমিল্লা- ভীতি কিভাবে কাটল তা বলি।
![]() |
| ছবিঃ বাম থেকে আবতাহী ও মৃন্ময় (যেরকম একটা দিনে আমরা এসেছিলাম এবং বিদায় নিয়েছি) |
৪।
আমি বাংলাদেশের সাধারন মানুষ হিসেবেই কুমিল্লা(অতীতে) -নোয়াখালি- বরিশাল (অতীতে*) ভয় পেতাম।
তারওপরে ওঁর বাজখাই স্বরভঙ্গিমা আমাকে যথেস্ট ভীতিতে রাখতো।
ফিজিক্স অলিম্পিয়াডে মারা খেয়ে যখন এবছর কুমিল্লা যাওয়ার চিন্তা করলাম, তখন ঈশ্বর নিশ্চয়ই হেসেছিলেন।
(রবীন্দ্রনাথ একবার ফুল পিশে রঙ বের করার জন্য একটা যন্ত্র বানানোর চেস্টা করে 'মারা খেয়ে' বলেছিলেন "যে যা নয় নিজেকে যখন তাই ভাবে তাঁর মাথা হেঁট করে দেবার এক দেবতা তৈরি থাকেন, শাস্ত্রে এমন কথা আছে" :3)
আমরা পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিয়ে একদিন কুমিল্লার উদ্দেশ্যে চললাম, আমার কুমিল্লা ঘুড়ে বেড়ানোর উত্তেজনাও ছিল বটে; ৩১ তারিখ অলিম্পিয়াড শেষে ময়নামতি, ভিক্টোরিয়া কলেজ এসব বেড়ানোর প্লান করছিলাম।
আগেরদিন রাতে ওঁর ফুপুর বাড়িতে পৌছালাম, এবং আমার কুমিল্লাভীতি* কেটে গেল। বড় অমায়িক মানুষ ওঁরা সবাই।
পেটপুরে খেয়েদেয়ে একটু পড়ালেখা করে কাল কি হবে এই ভেবে ভেবে আরাম করে ঘুমোলাম। শীতের সময়, সকালে উঠেই ভিক্টোরিয়া কলেজ যেতে হবে।
ঘুম থেকে উঠে গোয়েন্দাগিরি করতে করতে নাচতে নাচতে চলে গেলাম। কুমিল্লা শহর টা মোটামুটি ভালোই (যদিও ওমর ভাইয়া ভুল বলেননা 'ঢাকার বাইরে গোটা বাংলাদেশ-ই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ' :3) , মাঝে মধ্যে পুকুর দেখা যায়, সবাই দেখি আমাদের মতই মানুষ(!)
যাহোক, একসময় পৌঁছে গেলাম, ভিক্টোরিয়া কলেজ গেটে। পৌঁছে দেখি পুরো ফাঁকা, আমরা ভাবলাম আজ না আবার ২০ জন প্রতিযোগি হয়, আর আমরা ২০ তম হই :#
এদিক সেদিক তাকিয়ে আমরা সন্দিহান হয়ে পড়লাম, ঠিক যায়গা এসেছি তো!
নাহ, সব তো ঠিক-ই আছে। তাহলে?
আমি ভাবছিলাম, আমার মাথায় যা আসছিল তা যেন সত্যি না হয়!
......... ... ... ...
আমি বললাম একটু দাঁড়াও, মোবাইলে দেখি, এবং যা ভেবেছিলাম মানে ৩০ তারিখ অর্থাৎ গতকাল-ই হয়ে গেছে ফিজিক্স অলিম্পিয়াড।
... ... ... ... তারপর বাকিটা ইতিহাস।
আবতাহী বাকি পথ চুপচাপ চলে আসলো বাসায়। এরপর বাসে আগুন সহ নানা মজার ঘটনার মধ্য দিয়ে বিমর্ষ পরিবেশে ঢাকায় চলে এসে 'অলিম্পিয়াড নিপাত যাক, প্রলেতারিয়েত মুক্তি পাক" চিন্তা করে আমরা টেস্ট পরীক্ষার প্রস্তুতি নেয়া শুরু করলাম।
৪।
যখন ই যাই, দেখি আবতাহী সবসময়ের মতই ওঁর টেবিলে বসে পড়ছে। আমিও বিদ্রুপ করতে ছাড়িনা।
এত পড়ে কি করবা, লাভ নাই... ...
আমি তখন বোকা ছিলাম, কে জানে এখন আছি।
আমাদের সবাইকে অবাক করে দিয়ে ও টেস্টে ৫০ তম হল!
বাইরের কেউ বুঝবেনা নটরডেমে ২০০ থেকে ৫০ হওয়া কত কঠিন। কিন্তু এই ব্যপারটা ওঁর প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ সত্যিই জাগিয়ে তুলল।
"Hard Work Pays Off" কথাটার প্রমাণ সচক্ষে দেখলাম।
সত্যিই বলতে এরকম অবাক আমি খুব কম-ই হয়েছি।
৫।
আবতাহী একটু আধটু নাদুস নুদুস ইংরেজিতে যাকে বলে Chubby Looking.
মোটেও মোটা না।
তবে একই হোস্টেল থেকে তাঁর সুস্বাস্থের রহস্যের সন্ধান দুর্মুখেরা পেল মাত্র কিছুদিন আগে, যদিও তাঁরা নিন্দুক । কিন্তু, তারপরেও "যা কিছু রটে তাঁর কিছুনা কিছু তো বটে" :3
"Someone(Not to mention VNC :/ ): ..... bla.. bla...
Abtahee: Give me your pain.... "
এর বেশিকিছু লিখলাম না, আমার প্রানের মায়া আছে। :) (ব্যাঙ! ইমোজি)
৬।
ভালো থাকুক এই নাদুস নুদুস বুর্জোয়া, আমাদের গর্ভাচেভ; মাতৃভক্ত, বন্ধুবৎসল (বস্তুত; আমাদের সুধী সমাজের আলোচনায় যখন পেট টান পরে, একটু মিনমিন করে ওঁর দিকে চাইলেই খাবার জুটে যায় )
শহিদ আবুবকর আবতাহী দেশ, সমাজ , কোচিং সেন্টারের মডেলে পরিণত হোক , জাগতিক ব্যাথা শোষণ করে আরো ফুলে ফেপে উঠুক। সবসময় হাসিমুখ ধরে রাখুক (তাই বলে 'জোকার' না -_- !)
আর আমাদের প্রতি আরো সুবিচার করুক।
একটা অনুরোধ, "অবিশেষন যুক্ত ভাই আমার, দয়া করে গলার স্বরভঙ্গি টা বদলাও It sucks! :3"
শুভ জন্মদিন, শুভ হোক জীবনের সব দিন।
স্টারবাকসের কফি খেতে খেতে যেন কোনো একদিন এই লেখাটা আবারো পড়ার সৌভাগ্য হয়। :)


Comments