পাঠ অনুভূতি: অরওয়েলের '১৯৮৪'

কোন কাল্পনিক ভাবনা দ্বারা আমাদের চিন্তা ঠিক কতটুকু পর্যন্ত প্রভাবিত হতে পারে?

ধরুন, ইউটিউব এর একটি ভিডিও দ্বারা আমরা সর্বোচ্চ কতটুকু প্রভাবিত হব, তা নিশ্চয়ই ভিডিওটির বিষয়বস্তুর ওপর নির্ভর করে। আরেকটু সহজ করলে, ধরা যাক একটি মিউজিক ভিডিও দেখার পর আমাদের সর্বোচ্চ কি অনুভূতি হতে পারে?

আমরা ভিডিওটি খুব ভালো লাগলে হয়তো পরিতৃপ্ত হওয়ার একটা অনুভূতি ব্যক্ত করবো, কিংবা হাসবো, কাঁদবো কিংবা চিৎকার করবো, হয়তো সেটি নিয়ে ভাববো।

কিন্তু, আমরা ধরেই নিতে পারি যে, যতকিছুই হোক সেটি শেষ পর্যন্ত একটি ভিডিও, আপনার দুই হাত দুরে যে দাড়িয়ে আছে তার কাছেও সেটি একটি ‘ভিডিও’ মাত্র।

সত্যি বলতে, আমিও এক সময় তাই ভাবতাম, যতকিছুই হোক একটা গান তো শেষ পর্যন্ত একটা গান, কিংবা একটা বই তো শেষ পর্যন্ত একটা বই- ই। তা আমাদের সর্বোচ্চ কতটুকুই আর প্রভাবিত করবে?

মার্কেজ বলেছিলেন, কাফকার কোন একটা বই এর প্রথম লাইন পড়েই তার বিছানা থেকে পড়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল-কেউ এভাবে লিখতে পারে তা ভাবতে পারেননি মার্কেজ ।

তাই বলা যায়, আপনি বই পড়ে আনন্দিত হবেন, দুঃখিত হবেন, হয়তো একটু বেশি আনন্দিত হবেন বা একটু বেশি দুঃখিত হবেন। কারো জীবনে একটা বই আরো বেশি প্রভাবও ফেলে, তার চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনে, নতুন ভাবনার উদ্রেক করে। একটি বই কাউকে কাউকে পুনর্জন্মও দিতে পারে বলে শোনা যায়।

কিন্তু, কখনো কি এমন হয়েছে, আপনি আপনার ঘরের ব্যলকনিতে বসে একটি বই পড়ছেন, ঘরে দুইজন জলজ্যান্ত মানুষ আছে। আপনি একটি কাল্পনিক বই পড়ছেন, পড়ছেন… আপনার চারপাশে একটা অতি জাগতিক পরিবেশ আছে, আপনার বন্ধুরা দেখছে স্বাভাবিক একজন ছেলে একটি বই পড়ছে- অতি সাধারণ দৃশ্য!

কিন্তু আপনার মস্তিষ্কে কেউ যদি উকি দিতে পারতো সে হয়তো হতভম্ব হয়ে যেত, আসলে আপনি স্বাভাবিক কোন অবস্থায় নেই। সে দেখতো, আপনি এমন একটা অবস্থায় আছেন, যাকে বলা চলে বাস্তবতা ও অবাস্তবতার একটা মিশেল, কিংবা ঘোর। সে আরো দেখতো, আপনার খুব ইচ্ছে করছে, ব্যলকনির গ্রিলগুলো খুলে নিচে লাফ দিতে, কারন আপনি আর সহ্য করতে পারছেন না; এরকম করেও ভাবা সম্ভব, লেখা সম্ভব! 

এরকম করে যে কেউ ভাবতে পারে- সেই ভাবনাটাই আমাকে উল্টেপাল্টে দিচ্ছিল।

আমার মনে আছে, আমি বইটা শেষ করে আমার দুইজন বন্ধুকে একটি ক্ষুদেবার্তা পাঠিয়ে ছিলাম। যাতে লেখা ছিল-

Just finished the most weird, terrifying , stirring novel- I have ever been touched with. 1984: again, the insanely exquisite (too exquisite to be called clumsy!), imperturbable tranquility of the whole ******* thing (life, universe...) astounded me, while I was reading, sometimes my inner self was screaming & yelling as well as the thing- that someone (ORWELL) can think those 'thoughts,' that way - was diving me down to an ecstasy to do suicide (LUCKY THAT, THERE WAS A GRILL at the Balcony.)

Just quoting you "WHY SO DETAILED!!"

ব্যপারটা আসলেই এমন হয়েছিল! 



বলছিলাম জর্জ অরওয়েলের ‘১৯৮৪’ বইটি পড়ার অভিজ্ঞতার কথা। বইটি আমাকে এত বেশি প্রভাবিত করেছিল, কিংবা বইটি এত বেশি আকর্ষণীয় যে, আমার আস্ত ১ টি মাস সময় লাগলো এই অভিজ্ঞতাটুকুর কথা লিখতে।

বইটি আসলেই ওরকম কিনা, সেটা বুঝতে প্রায়ই ঘাটাঘাটি করতে হয়েছিল, বিভিন্ন আর্টিকেল পড়েছি।
সত্যিকার অর্থেই এখন দাবী করতে পারবোনা বইটির কতটুকু বুঝেছি। শুধুমাত্র নিউইয়র্ক টাইমস এ ২০ টির অধিক আর্টিকেল আছে বইটি নিয়ে, তাহলেই বোঝা উচিত। 

আসলে আরো অনেক বছর লাগবে, বইটার একটা সত্যিকার পর্যালোচনা লিখতে। এরপরেও রীতিমত দুঃসাহস করে শুধুমাত্র ধারাবাহিকতা রক্ষার স্বার্থে গুডরিডস-এ এই রিভিউটি লিখেছি।

ধৃষ্টতার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী!