Ode to the life I never had: অদেখা স্বর্গ



হঠাৎ হঠাৎ খুব ইচ্ছে হয় একটা অন্য মানুষ হয়ে যেতে! 

অন্যরকম একটা মানুষ, যে কিনা এখনকার ‘আমি’ টা নাহ!  তীব্র উচ্চাভিলাষী এবং ছাপোষা মধ্যবিত্ত সেন্টিমেন্টের বলয়ে বেষ্ঠিত থাকা সতর্কভাবে বেছে নেয়া এই জীবনটার বাইরে অন্য কোন একটা জীবন যার! যে জীবনে আমার এই জীবনের মত পূর্ণতার আভিজাত্য নেই! জীবনে যা কিছু চেয়েছি তা পাওয়ার উৎকট প্রশান্তি বিহীন একটা জীবন! 


সাধাসিধে অপূর্ণ একটা জীবন! 


অপূর্ণ জীবন কেমন হয়? 


‘না পাওয়ার গল্প’ নামের অনেকগুলো গল্প থাকে সেখানে?

নাকি একটাই গল্প থাকে নামে-বেনামে? যেই গল্পের লাইন থাকে একটিই—”এই জীবনে কিছু পাওয়া হলোনা! বৃথা মানবজন্ম!”



                সেই সব— সেই সব— সেই হাহাকাররব,


                সেই অশ্রুবারিধারা, হৃদয়বেদনা ।।


                কিছুতে মনের মাঝে শান্তি নাহি পাই,


                কিছুই না পাইলাম যাহা কিছু চাই ।


              ভালো তো গো বাসিলাম,  ভালোবাসা পাইলাম,


              এখনো তো ভালোবাসি— তবুও কী নাই ।।


এরকম ভরপুর একটা না পাওয়া? 

নাকি আর একটু সহজ? উন্মাতাল ভাবে কারো প্রেমে পড়ে সেই মানুষকে না পাওয়ার গল্প? কিংবা, সেই মানুষটাকে পেয়েও হারানোর গল্প? কিংবা, কখনোই সেই মানুষটাকে না বলতে পারার অপূর্ণতা? 


হল না লো, হল না, সই, হায়--

মরমে মরমে লুকানো রহিল,   বলা হল না।

বলি বলি বলি তারে   কত মনে করিনু--

হল না লো, হল না সই॥

না কিছু কহিল,   চাহিয়া রহিল,

গেল সে চলিয়া,   আর সে ফিরিল না।

ফিরাব ফিরাব ব'লে   কত মনে করিনু--

হল না লো, হল না সই॥


আমার কোন চাইল্ডহুড ট্রমা নাই। অদ্ভুত আর ভয়ঙ্কর সুন্দর একটা শৈশব পেয়েছি। অনেক দিক-বিদিগে যাওয়ার হাতছানি, সুন্দর-অসুন্দরের স্পর্শ, মধ্যবিত্তের ক্লাসিক পাওয়া-না পাওয়ার গল্প সেসব ছিল! নিশ্চয়ই ছিল! কিন্তু সেটাকে নিশ্চয়ই অপূর্ণতা বলা চলেনা?


না ঘুমাতে পেরে ছটফট করা রাত কী খুব বেশি ছিল, যাকে অপূর্ণতা বলা যেতে পারে? নাহ! 

কিংবা, দুঃস্বপ্ন থেকে চিৎকার করে ওঠা রাত? সেও নাহ! 

অনেক পাওয়া না পাওয়ার কথা হিসেব করতে বসলে হিসেবের খাতায় আনা যায়! কিন্তু সে হিসেব শুধু পুর্ণতাতেই গিয়ে ঠেকে! 

পূর্ণতা-ই তো সবার কাছে পূজনীয়, তাইনাহ? 

পূর্ণ একটা জীবনে তবে কেন যেচে এই অপূর্ণতা খুঁজতে যাওয়া? 


সব ‘পাওয়ার’ মধ্যে কেমন জানি একরকম উৎকটতা দেখি! পাওয়ার অনুভূতিগুলোর একরকম লোক দেখানো ব্যপার আছে! ইচ্ছে করে তৈরি করা যে, তা নয়! এমনিই হয়ে যায় কেন জানি! 


কিন্তু, ইউটিউবের একটা বিরহের গানের নিচের কমেন্টে লেখা “sob e celore gan, sodo taka celona amar?” এই আর্তচিৎকারের মধ্যে একরকম শুদ্ধতা আছে। কোন ভান নেই। বুকের সবটুকু আর্তচিৎকার অক্ষরে জমা করে লেখা এই কমেন্টকারীর সেই জীবনটা পেতে ইচ্ছে করে, যেখানে এরকম শুদ্ধ একটা অনুভূতি আছে! 

কিংবা, দূরে যদি চলে যাবি সার্থপর এই গানটার অবলিকের ভোকালে কাভার করা গানটা শুনলেই মনে হয়না যে জ্যোৎস্না দেখিয়ে সার্থপরের মত চলে যাওয়া কারো জন্য এক হৃদয়ভাঙা তরুণের বিশুদ্ধ কান্না?

এরকম বিশুদ্ধ ভাবে আমার কখনো কান্না পাবে? 


আমি কেন কাঁদতে পারিনা! 

একদম ভেজিটেবল ধরণের ইনডিফারেন্ট একটা অনুভূতি নিয়ে লিখতে বসা সব কিছু থাকা এই আমার, কখনো একটা বিশুদ্ধ অনুভূতি গুলো হবে অপূর্ণতা ছাড়া?

তাই বলতে হয় অপূর্ণতার অনুভূতির এই বিশুদ্ধতাটুকুর উপরেই আমার লোভ! সম্ভবত অপুর্ণতা নয়, অনুভূতির এই শুদ্ধতাটুকু খুঁজছি আমি? যাতে আর কখনো কান্নার সময়ও খেয়াল রাখা না লাগে কে দেখছে, কে কী ভাবছে! 

আরেকটু সহজ মানুষ? আরেকটু সাধারণ মানুষ? যার অনুভূতি গুলো আরেকটু নিখাদ হবে! শুদ্ধ হবে! অনুভূতির দহনেই যেন শুদ্ধতা চলে আসে!

Every pain must be felt, right?


What I do is just to touch the pain, quietly observe, and let it flow… surely it gives me relief… but...


অপূর্ণতার অনুভূতির থেকে শুদ্ধ আর কী আছে!

সম্ভবত কিছুটা পূর্ণতার এই অহমের থেকে অনেক ভালো এই অপুর্ণতা! তাই কিছু অপুর্ণতা চাইবো জীবনে? নিজেকে আরেকটু শুদ্ধ করতে! কিন্তু, টিকতে পারবো তো! নাকি তার আগেই ছাই হয়েই উড়ে যাবো? 


“আমরা কেবল পূর্ণতাতেই ঋদ্ধ হই না, হই শূন্যতাতেও।”


 

  

 




 


 


Comments